আস্সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি এবং তার সাহাবী তাবেয়ী ও কেয়ামত পর্যন্ত তার সকল অনুসারীদের প্রতি। অতঃপর: সুপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ।
দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদরাসা কোরআন ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক পরিচালিত বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার নামের সাথে জড়িত রয়েছে সালাফিয়্যাহ। অর্থাৎ সেই স্বর্ণযুগের মানুষগুলোর ইতিহাস সংক্ষেপে যদি বলি সালাফিয়্যাহ বলতে বুঝায়- রাসূল সাঃ এর সাহাবীগণ এবং তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীগনকে। রাসূল (সা) বলেন সর্বোত্তম যুগ আমার যুগ তারপর আমার সাহাবাদের যুগ তারপর তাবেঈদের যুগ এই তিন যুগকে বলা হয় (খাইরুল কুরূন) বা স্বর্ণযুগ। অর্থাৎ খোলাফায়ে রাশেদীনসহ রাসূল (সা) এর অন্যান্য সাহাবীরা ছিলেন বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে দীপ্ত প্রদীপ ও তারকারাজির মতো। কারণ তারা রাসূল (সা) থেকে যা শুনতেন এবং দেখতেন সাথে সাথে মেনে নিতেন এবং আমল করতেন।
আর রাসূল (সা) নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহীর নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল ও কথা বলতেন না। যার ফলে সাহাবীদের আমল ছিল খাঁটি এবং বিশুদ্ধ। যে আমলের মধ্যে ভেজাল প্রবেশের কোনো সুযোগ ছিল না। তাদের একনিষ্ঠ তাওহীদ, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের কারণেই হয়তো আল্লাহ তাদের ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেন,
رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ
অর্থ: আমি তাদের উপর সন্তুষ্ট। আর তারাও আমার উপর ছিল সন্তুষ্ট। (অর্থাৎ সাহাবীগণ) অতএব, যাদের আকিদা আমলে মহান আল্লাহ খুশি, তাদের প্রদর্শিত পথে যদি আমরাও চলতে পারি তাহলে মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট ও খুশি থাকবেন বলে আমরা আশাবাদী। আর মহান আল্লাহকে রাজি-খুশি করাই আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সুপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ। মহান আল্লাহ বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
অর্থ: আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য অর্থাৎ (তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য) এখন এই ইবাদত তথা তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন জ্ঞান/ ইলম। এ সম্পর্কে নবী (সা) বলেন:
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ
অর্থ: প্রত্যেক মুসলিমের জন্য দ্বীনি ইলম অর্জন করা আল্লাহ ফরজ করেছেন। একজন মুসলিমকে সর্বপ্রথম তাওহীদ ও সুন্নাহর ইলম অর্জন করতে হবে। তবেই সে প্রকৃতপক্ষে তার রব, নবী (সা), জান্নাত ও জাহান্নাম, ফেরেশতা, কেয়ামত দিবসকে সঠিকভাবে চিনতে পারবে। আর তখনই সঠিক আক্বীদা পোষণ ও বিশুদ্ধ আমল করা সম্ভব হবে। আর এর মাধ্যমেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আজকের সমাজে বহু মুসলিম এমনকি আরবি শিক্ষিতদের মধ্যেও অনেকে আছেন যাদের মাঝে বিশুদ্ধ তাওহীদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যার ফলে তারা তাওহীদ বিরোধী শিরকি কর্মকান্ডে জড়িত আছে এবং হচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ এই শিরক সম্পর্কে বলেন:
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.
অর্থ: নিশ্চয় যারা শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তাদের জন্য আমার জান্নাত হারাম এবং তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। আর এই জালিমদেরকে সাহায্য করার জন্য সেদিন কেউ থাকবে না (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৭২)।
তেমনিভাবে রাসূল (সা) এর প্রকৃত সুন্নাহকেও তারা সঠিকভাবে জানে না, যার ফলে প্রতিনিয়ত তাঁরা সুন্নাহর বিপরীত ভয়ঙ্কর বিদআতি আমল করে চলেছে যার ফলাফল অত্যন্ত ভয়ানক। যেমন রাসূল (সা) বলেন:
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ. أخرجه أبو داود. وزاد النسائي بإسناد حسن: وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
অর্থ:- প্রত্যেক নব আবিস্কৃত ইবাদতই বিদআত আর প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামের আগুনে যাবে।
সুপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ লক্ষণীয় বিষয় হল বিশুদ্ধ তাওহীদের জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ আল্লাহর সাথে শিরক করছে যার পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। আর বিশুদ্ধ সুন্নাহর জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ অহরহ করছে বিদআত, যার ফলাফলও জাহান্নাম। নাউযুবিল্লাহ! এই অবস্থায় দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা শুরু করে কীভাবে এই জাতিকে ভয়ংকর শিরক ও বিদআত থেকে ফিরিয়ে বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সুন্নাহর পথে আনা যায়। আলহামদুলিল্লাহ! অনেক জল্পনা-কল্পনার পর পরিশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমাদের বিজ্ঞ উপদেষ্টামন্ডলী এবং কমিটির সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই আর তা হলো এই জাতিকে বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সুন্নাহর শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে তার জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সুন্নাহ শিক্ষার একটি মাদরাসা।
যে মাদরাসার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে রাসূল (সা) এর আদর্শের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন, যে মাদরাসা পরিচালিত হবে কুরআন ও সহীহ হাদিস ভিত্তিক, যে মাদরাসার শিক্ষাব্যবস্থায় সালাফে সালেহীনের মানহাজের অর্থাৎ খোলাফায়ে রাশেদীন ও রাসূল (সা) এর সাহাবীগণ ইসলামকে যেভাবে বুঝেছেন ও আমল করেছেন সেই অনুযায়ী অত্র মাদরাসার শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হবে ইনশা আল্লাহ।
এই মর্মে আল্লাহর উপর ভরসা করে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করে দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদরাসা যার একমাত্র লক্ষ্য উদ্দেশ্য হলো বিশুদ্ধ তাওহীদ ও সুন্নাহ সমাজের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া এবং এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর মহান আল্লাহ যদি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে পরকালে সেই কঠিন হাশরের দিন আমাদেরকে তিনি তার মূল্যবান জান্নাত দিবেন ইনশা আল্লাহ। হে আল্লাহ আমরা তোমার নিকট জান্নাত চাই আর জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই, আমিন!
সকলের কল্যাণ কামনায়….
মোঃ আবুল হাসেম বিন আব্দুর রহমান
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
দারুস সালাম সালাফিয়্যাহ মাদরাসা